হরেক রকমের কাবাব, মোঘলাই খানার স্বাদ পেতে চান? রমজান মাসেই ঢুঁ মারুন জাকারিয়া স্ট্রীটে, মন-পেট দুই-ই ভরবে

চলছে রমজান মাস (Ramadan month)। আর কলকাতা (Kolkata) এমন একটা জায়গা যেখানে নানান ধর্মের নানান উৎসবই বেশ সানন্দে পালন করা হয়। আর উৎসব মানেই নানান খানাপিনার ভাণ্ডার। আর রমজান মাস এলেই ঈদের কথা মনে হতেই মনটা কেমন যেন কাবাব কাবাব করে ওঠে। আর কলকাতার সেরা কাবাব (Kebab) বা মোঘলাই খাবারের (Mughlai food) ঠিকানা তো এক ডাকে সকলেই চেনেন!
কী বুঝতে পারলেন না কলকাতার কোন জায়গার কথা বলা হচ্ছে? জাকারিয়া স্ট্রীট (Zakaria Street)! নাখোদা মসজিদের এই জাকারিয়া স্ট্রীট বলতে গেলে কাবাবের আস্তানা। শুধু কাবাব কেন, নানান ধরণের মোঘলাই খাবার পেতেও এই স্থানের জুড়ি মেলা ভার। আর মোঘলাই খাবারের ফ্যান হলে কিন্তু একবার না একবার এই জাকারিয়া স্ট্রীটে ঘুরে আসতেই হবে আপনাকে।
শুধু রমজান মাসই নয়, গোটা বছরই এখানকার নানান দোকানে মেলে জিভে জল আনা নানান খাবার। তাহলে একবার আমাদের সঙ্গেই ভারচুয়ালি ঘুরে আসবেন নাকি জাকারিয়া স্ট্রীটে?
নাখোদা মসজিদের এই রাস্তা অর্থাৎ জাকারিয়া স্ট্রীটে ঢুকে প্রথমেই আপনার চোখে পড়বে নানান ধরণের পানীয়ের মেলা। রুহ আফজা থেকে শুরু করে নানান ফলের জুসের দোকান। সেখান থেকে একটু গলা ভিজিয়ে এগিয়ে চলুন। দু’পাশে দেখা যাবে থরে থরে সাজানো হরেক রকমের শিমাই। হ্যাঁ, কাঁচা শিমাই-ই বটে। তবে এত ধরণের শিমাইও যে হয়, তা এই জাকারিয়া স্ট্রীট না গেলে হয়ত ধারণাই করা যাবে।
এর থেকে কয়েক পা এগোতেই চোখে পড়বে হালুয়া-পরোটার দোকান। দিল্লির হালুয়া গলির মতো এখানেও সেই স্টাইলে বিক্রি হয় হালুয়া-পরোটা। বিশাল বড় সাইজের পরোটা ছাঁকা তেলে ভেজে তা পরিবেশন করা হয় হালুয়া সহযোগে। এই হালুয়া-পরোটা কিন্তু বিক্রি হয় ওজন হিসেবে। ৫০ গ্রাম হালুয়া-পরোটার দাম ৫০ টাকা।
এরপর চলুন এগিয়ে যাওয়া যাক ‘দিল্লি ৬’এর দিকে। সেখানকার শেরমল আর আফগানি কাবাব যদি না-ই খেলেন, তাহলে আর জাকারিয়া স্ট্রীট যাওয়া কেন! আফগানি কাবাব এখানকার বিখ্যাত খাবার হলেও এখানে আরও নানান ধরণের কাবাব পাওয়া যায়। মন ভরে উপভোগ করুন সেই কাবাবের স্বাদ।
এবার একটি স্বাদ বদলের জন্য ঘুরে আসা যাক তাস্কিনের দিক থেকে। প্রথমেই সেখানে ট্রাই করুন ফালুদা যা এখানকার অন্যতম জনপ্রিয় খাবার। মিষ্টি মিষ্টি ফালুদার পরই ঝাঁপিয়ে পড়ুন মুর্গ চেঙ্গিসের দিকে। ছোটো ছোটো পিস করে কাটা চিকেনের টুকরো নানান মশলা দিয়ে ভাজা যা আপনার স্বাদকোরককে এক স্বর্গীয় সুখ দিতে বাধ্য।
এবার একটু ঢুঁ মারা যাক ‘আল বাইক’-এর দিকে। সেখানে প্রসিদ্ধ হল শিক কাবাব। সেখানে কাবাব ছাড়াও ভালো মাছও পেতে পারেন আপনি। ভেটকি মাছ এখানে বেশ জনপ্রিয়। তবে কাবাবের দিকে ঝোঁক থাকলে সেটাই ট্রাই করতে পারেন। প্রতি শিকের দাম ৩০ টাকা। আর ‘আল বাইক’-এর অন্যতম সেরা খাবার হল হালিম। যা ঈদের সময়ের এক অনন্য খাবার। সেখান থেকে একবার অন্তত হালিম খেয়ে দেখতেই হবে আপনাকে।
‘আল বাইক’-এই কিন্তু সব কাবাব খেয়ে কাবাবের সম্পূর্ণ স্বাদ পরিপূর্ণ করে নেবেন না। কারণ এরপর একটু হাঁটতে হাঁটতে আপনার চোখে পড়বে ‘আদাম’স কাবাব শপ’। সেখানকার শিক সুতলি কাবাবও কিন্তু মুখে লেগে থাকার মতো। শিকের মধ্যে সুতো দিয়ে জড়িয়ে তৈরি করা হয় এই কাবাব। প্রতিটি শিকের দাম ৮০ টাকা। এরপর তা পরিবেশন করা হয় কাঁচা পেঁয়াজ ও এক টুকরো পাতিলেবুর সহযোগে।
এবার আস্তে আস্তে জাকারিয়া স্ট্রীট থেকে বাইরে আসার পালা। তবে এত কাবাব এত চটপটা খাবার খেয়ে শেষ পাতে একটু মিষ্টি না হলে যেন মনটা কিছুতেই শান্ত হয় না। আর জাকারিয়া স্ট্রীটে যাবেন আর হাজি আলাউদ্দিনে একবারও ঢুকবেন না, তা কীভাবে হয়।
তাহলে ঢুকে পড়ুন হাজি আলাউদ্দিনে আর ট্রাই করে ফেলুন মাওয়া লাড্ডু। হালকা মিষ্টির এই লাড্ডু কিন্তু আপনার মন প্রাণ ভরাতে বাধ্য। এখানকার বত্তিশি হালুয়া তো একবার চেখে দেখতেই হবে। এই হালুয়া এই দোকানের অন্যতম সেরা মিষ্টি। এবার শেষ পাতে মিষ্টিমুখ হলে আর কী, একরাশ মুগ্ধতা আর মনপ্রাণ ভরানো খাবারের স্বাদ সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ফেরার পালা।
রমজান মাস হোক বা বছরের অন্য কোনও সময়, জাকারিয়া স্ট্রীটে কিন্তু এই খাবারের ভাণ্ডার আপনি সবসময় পাবেন। আর আপনি যদি ভোজনরসিক হন, তাহলে একবার অন্তত ঢুঁ মেরে দেখেই আসুন এই জায়গায়। নিরাশ হয়ে যে ফিরতে হবে না আপনাকে সে গ্যারান্টি দেওয়াই যায়।
ছবি সৌজন্যে – ইন্টারনেট